তবে সেটা মোকাবেলা করার জন্য সরকার ও আমাদের কি কিছু করার নেই?
গার্মেন্ট
শিল্প বাংলাদেশে কিভাবে গড়ে ঊঠেছে?
বাংলাদেশের তৈরি
পোশাক
শিল্প
কোনো
সরকারি
পরিকল্পনার ফসল
নয়।
এটি
গড়ে
উঠেছে
সাহসী
কিছু
উদ্যোক্তার হাত
ধরে,
যারা
১৯৮০’র দশকে সীমিত
মূলধন
ও
অভিজ্ঞতা নিয়েই
যাত্রা
শুরু
করেছিলেন। একসময়ের ছোট
উদ্যোগ
আজ
প্রায়
৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এবং
৪৮ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের উৎসে
পরিণত
হয়েছে।
কিন্তু
দুঃখজনকভাবে এই
শিল্পের পেছনে
সরকারি
পরিকল্পনা বা
দীর্ঘমেয়াদি নীতির
জোরালো
উপস্থিতি দেখা
যায়নি।
বরং
এই
শিল্পে
কর্মরত
উদ্যোক্তারা বছরের
পর
বছর
ধরে
নানা
প্রকার
বাধা
মোকাবিলা করে
একাই
এগিয়ে
গেছেন।
অন্যদিকে সরকার
এই
খাত
থেকে
ভ্যাট,
ট্যাক্স, ইউটিলিটি বিল,
বৈদেশিক মুদ্রা,
এমনকি
রাজনৈতিক সাফল্যের কৃতিত্বও নিয়েছে। তবে
যখন
সংকট
আসে,
তখন
সরকার
প্রায়শই পর্যাপ্ত সহায়তা
দিতে
ব্যর্থ
হয়। যদিও সরকার এই গার্মেন্ট খাতের বড়
বড় ব্যাবসায়ীরাই চালিয়েছে, দুঃখজনক হলেও তারাও দেশের উন্নয়নে ও ভবিষ্যত বিনির্মানের
চেয়ে দেশের গরীব মানুষের ট্যাক্সের টাকা মেরে বিদেশে সেফ হোম বিনির্মানেই বেশী
ব্যাস্ত ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ আরোপ: একটি বড় ধরনের সংকট ও সুযোগ
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গার্মেন্টস রপ্তানির একটি
গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য, যেখানে
প্রতি
বছর
প্রায়
৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়।
এই
বাজারে
উচ্চ হারে শুল্ক (Tariff)
আরোপের
ফলে
এখন
ক্রেতারা বাংলাদেশের পণ্য
তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল এবং ক্রেতারা কম কিনবে। ফলে
চীন,
ভিয়েতনাম, ইথিওপিয়া ও
মেক্সিকোর মতো
দেশগুলোর সাথে
প্রতিযোগিতা আরও
কঠিন
হয়ে
পড়বে।
এই
ট্যারিফের ফলে
অর্ডার
কমে
যাওয়া,
কারখানা বন্ধ
হওয়া,
শ্রমিক
ছাঁটাই
এবং
আয়
কমে
যাওয়ার
ঘটনা ঘটতে পারে।
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয়: যা এখনই করতে হবে
১।
কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করাঃ যুক্তরাষ্ট্রের
সঙ্গে
সরকারের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে GSP সুবিধা
পুনরুদ্ধার এবং
ট্যারিফ আরোপ
কমানোর
জন্য
সক্রিয়
কূটনীতি চালাতে
হবে।
২।
আর্থিক প্রণোদনা
ও ঋণসুবিধা বৃদ্ধি
রপ্তানিকারকদের
জন্য
ডলার
রেট
সুবিধাজনক করতে
হবে
ব্যাংক ঋণে সুদের
হার
কমানো
নগদ সহায়তা ও
রেয়াতি
কর
সুবিধা
দিতে
হবে
৩।
সরকারি সহযোগিতার
কাঠামোগত সংস্কার
জটিল
আমলাতন্ত্র, ঘুষ,
এলসি
জটিলতা,
কাস্টমস বাধা—এসব দূর করে
একটি
ব্যবসাবান্ধব নীতি
নিশ্চিত করতে
হবে।
৪। বিকল্প বাজারে প্রবেশ
সিঙ্গাপুর, সৌদি
আরব,
ব্রাজিল, দক্ষিণ
আফ্রিকা, জাপানসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় বাজারে
রপ্তানি বাড়াতে
বাণিজ্য দূতাবাস ও
রপ্তানি উন্নয়ন
ব্যুরোর মাধ্যমে সক্রিয়
হতে
হবে।
৫। প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন ও দক্ষতা উন্নয়ন
লো-কস্ট লেবার মডেল
থেকে
বেরিয়ে
অটোমেশন, ডিজাইনিং, ফ্যাশন
ট্রেন্ড বিশ্লেষণ, ই-কমার্স সক্ষমতা বৃদ্ধি
করতে
হবে।
শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ
মানবসম্পদ তৈরি
করতে
হবে।
৬। কারখানার
অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ও সংস্কৃতির উন্নয়নঃ প্রডাক্টিভিটি উন্নয়ন, ইফিসিইয়েন্সি বৃদ্ধি, ব্যয়
সংকোচন, অপচয় রোধ ও KPI বেজড পার্ফরমেন্স আনালাইসিস, দেশি বিদেশী কর্মীদের
পারিশ্রমিকে সমতা সহ সকল বিষয়ে সঠিক তথ্য উপাত্য সংগ্রহ, সংরক্ষন, বিশ্লেষণ, ও
সিদ্ধান্ত গ্রহন।
ভবিষ্যতের পথ: ইন্ডাস্ট্রি ডাইভারসিফিকেশন জরুরি
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টেকসই
করতে
একমাত্র গার্মেন্টস শিল্পের ওপর
নির্ভর
করা
চলবে
না।
তাই
এখনই
ইন্ডাস্ট্রি ডাইভারসিফিকেশন বা
শিল্প
বৈচিত্র্যায়নের দিকে
এগোতে
হবে। কিন্তু এখানেও একটা দুঃখজনক ব্যাপার
লক্ষ্যনীয় সেটা হল, একজন গার্মেন্টস মালিক একটা ফ্যাক্টরী থেকে ১০ গার্মেন্ট
ফ্যাক্টরী করছে কিন্তু অন্য সেক্টরে মুভ করছেনা। এই যায়গা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে।
সম্ভাবনাময় খাতগুলো হলো—
আইটি ও সফটওয়্যার
এক্সপোর্ট
ফার্মাসিউটিক্যালস
ও মেডিকেল ডিভাইস
জাহাজ নির্মাণ
ও মেরিন ইন্ডাস্ট্রি
চামড়া ও পাদুকা
শিল্প
ফুড প্রসেসিং
ও অ্যাগ্রো বেইজড ইন্ডাস্ট্রি
প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উতপাদন
এছাড়া
গবেষনা ও নতুন উদ্যোক্তা তৈরীতে
বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ আরোপ
নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের তৈরি
পোশাক
খাতের
জন্য
একটি
হুমকি।
তবে
এই
চ্যালেঞ্জকে পরিণত
করা
যায়
একটি
নতুন
সুযোগে—যদি তা বুঝে,
পরিকল্পনা করে,
এবং
সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সঠিক
সমন্বয়ের মাধ্যমে একযোগে কাজ করা
যায়।
সরকার,
উদ্যোক্তা ও
শ্রমিক—সকলকে নিয়ে একটি
শক্তিশালী, প্রযুক্তিনির্ভর, বৈচিত্র্যময় শিল্প
কাঠামো
গড়ে
তুলতে
পারলেই
ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হতে
পারে
শুধু
গার্মেন্টস-নির্ভর
নয়,
বরং
একটি
পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনশীল জাতি।
No comments:
Post a Comment