Header Ads

কিউ এম এস এর পূর্ব শর্ত

কিউ এম এস এর পূর্ব শর্তঃ কিউ এম এস একটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যা সফল্ভাবে প্রয়োগ করতে গেলে কিছু সূত্র বা অনুমিতির অনুসরণ করতে হয়, অন্যথায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন সম্ভব নয়। আসুন জানি সেই সূত্র ও অনুমিতি গুলো কি।



 

প্রতিশ্রুতিবদ্ধ টপ ম্যানেজমেন্টঃ কিউ এম এস এর সুফল পেতে গেলে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি প্রয়োজন তা হল একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ টপ ম্যানেজমেন্ট। যে ম্যানেজমেন্ট সরাসরি কিউ এম এস কে নিজেদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করবে। যেহেতু কিউ এম এস বিষয়টা একটি প্রটিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগ বা সেকশনের সাথে জরিত। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেটা হয় সেটা হল, ম্যানেজমেন্ট একজন এম আর (ম্যানেজমেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ/ কিউ এম এস রেসপন্সিবল) নিয়োগ দেয়। এই এম আর এর পদবী থাকে অফিসার/ এক্সিকিউটিভ বা সর্বোচ্চ ম্যানেজার। ম্যানেজমেন্ট মনে করে এই লোক আমার সব করে দিবে। এই লোক ম্যানেজমেন্টের সহযোগিতা বা বেশী হস্তক্ষেপ চাইলে ম্যানেজমেন্ট বলে আমরা সব করলে তোমারে রাখছি ক্যান বা তোমার কাজ কি আমি করে দিব ইত্যাদি। চাকরীর প্রয়োজনে সেও আর ম্যানেজমেন্টের কাছে খুব বেশি যায়না। তার কাজ যেহেতু সকল বিভাগেই আছে তাই কিছু দিন সে বিভাগীয় প্রধানদের পিছনে ঘুরঘুর করে এটা লাগবে, ওটা লাগবে ইত্যাদি। এসময় বিভাগিয় প্রধান গনের ইগো জেগে ওঠে। আমি কেন আপনার কথায় এত সব করতে যাব? আমি এ জি এম, জি এম, একটা বিভাগের প্রধান, হোমরা চোমরা এই আর কি! নিরুপায় এম আর তখন কিছুদিন দৌড়াদৌরি করে ক্লান্ত হয়ে ফেক বা ভুয়া রিপোর্ট বানিয়ে তার দায় সারে। অডিট বা সার্টিফিকেশন কোম্পানিগুলো কতগুলো টাকা নিয়ে ভুয়া রীপোর্টগুলো দেখে সন্তুষ্টির ধোয়া তুলে সার্টিফিকেট দিয়ে চলে যায়। ম্যানেজমেন্ট তার প্রতিষ্ঠানের গেটে একটা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে। এভাবে দিন যায়, মাস যায়,‌ বছর আসে কিন্তু কিউ এম এস এর কোন ফলাফল আসেনা। অপূর্নতা নিয়ে পরে থাকে বেচারা সাইনবোর্ড সর্বোস্ব কিউ এম এস।

কিউ এম এস এর প্রকৃত ফলাফল পেতে গেলে এই ব্যাবস্থাটা ভাঙ্গতে হবে। কিউ এম এস এর দায়ীত্ব নিতে হবে টপ ম্যানেজমেন্টকেই। নিশ্চিত করতে হবে প্রতিটি বিভাগের জবাবদিহীতা। আর তাদেরকে সব ধরনের তথ্য উপাত্য দিয়ে রকোয়্যারমেন্ট গুলো ফলো-আপ করে সহযোগিতা করবে কিউ এম এস রেসপন্সিবল। তাহলেই সম্ভব কিউ এম এসের প্রকৃত ফলাফল অর্জন।

অর্থাৎ কিউ এম এসের সফল প্রয়োগ ও তার ফল প্রাপ্তির জন্য ডেডিকেটেড টপ ম্যানেজমেন্টের বিকল্প নাই।

ব্যাবহারকারী বান্ধব সহজ সিস্টেমঃ কিউ এম এস এর প্রসেস, প্রসিডিউর, রুটিন, ডকুমেন্টেশন, ডাটাবেজ, এনালাইসিস ইত্যাদি যারা ব্যাবহার করবে তাদের শিক্ষা ও দক্ষতার স্তর বিবেচনা করে এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে সবাই বুঝতে, অনুসরন করতে বা ব্যাবহার করতে পারে।

 

দায়ীত্বের সুস্পষ্ট বন্টনঃ আমাদের দেশে এমন অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে সুনির্দিষ্ট জব ডেসক্রিপশন নাই। কিছু কিছু যায়গায় থাকলেও তা নিতান্ত দায় সারা গোছের। যে যার মত কাজ করে, কাজ নিয়ে চলে ঠেলাঠেলি। একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি পদের জন্য আলাদা কে পি আই সহ সুনির্দিষ্ঠ জব ডেসক্রিপশন থাকতে হবে, যা তাদেরকে নিয়োগের সময় বুঝিয়ে দিতে হবে এবং সাক্ষর করে এক কপি পারসোনাল ফাইলে সংরক্ষন করতে হবে এবং কপি কর্মীকে দিতে হবে।

 প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিশ্চিত করণঃ অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা হয়ত খুব ভাল মানের জেডি তৈরী করেছে সেটা সরিবরাহ ও যথাযথ সংরক্ষনও করেছে কিন্তু লোক নিয়োগ দিয়ে রেখেছে অদক্ষ, কারো আত্নীয়, কারো বন্ধু, কারো এলাকার লোক। যারা প্রতিষ্ঠানে নানা জটিলতার মাধ্যমে অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ  করছে। তেলবাজি আর অশুভ প্রতিযোগিতার ভিরে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃত কাজ জানা বা প্রতিভাবানরা। কাজেই নিয়োগের সময়েই বা পরবর্তিতে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিশ্চিত করতে না পারলে, কাজ জানা ও প্রতিভাবানদের ধরে রাখতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসবেনা।

তথ্য সংরক্ষন, বিশ্লেষন ও ব্যাবহারঃ এখন সময়টাই হচ্ছে তথ্য উপাত্যের। যার কাছে যত বেশি তথ্য আছে সে তত বেশি বিশ্লেশন করে বাস্তবতার খুব কাছাকাছি গিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে। কাজেই কি কি তথ্য প্রয়োজন তা নির্ধারণ, সঠিকভাবে তথ্য সংরক্ষন, বিশ্লেষন ও তথ্য-উপাত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহন নিশ্চিত করতে হবে, অনুমান নির্ভর সিদ্ধান্ত নেয়া যাবেনা।

 

মুল্যায়নঃ একটি নির্দিষ্ট সময় পরে প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ব্যাক্তি, প্রসেস বা সিস্টেমকে সংরক্ষিত তথ্য উপাত্য বা ফলাফলের ভিত্তিতে  একটি সুনির্দিষ্ঠ প্রকৃয়ার মধ্য দিয়ে মুল্যায়ন করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে কোন সুনির্দিষ্ঠ প্রকৃয়া, তথ্য উপাত্য ছাড়াই কেবল মাত্র মুখ দেখে বা অতি সাম্প্রতিক পারফরমেন্সের ভিত্তিতে মুল্যায়ন করা হয়। যা কিউ এম এস এর সফল প্রয়োগের পথে অন্যতম অন্তরায়।

 

সুতরাং কেউ যদি প্রকৃত অর্থেই কিউ এম এস প্রয়োগ করতে চায় তবে সবার আগে ম্যানেজমেন্টের সদিচ্ছার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে ক্রেতার প্রয়জনে বা চাহিদার কারনে নয় উন্নয়নের জন্য কিউ এম এস আমরা কিউ এম এস করিছি।

পরবর্তিতে আমরা কিউ এম এসের নীতি সমুহ নিয়ে আলোচনা করব। আপনাদের সুচিন্তিত মতামত আশা করছি। সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

No comments

Theme images by A330Pilot. Powered by Blogger.